রাকিব অনেকদিন ধরেই নিজের একটি ব্লগ সাইট চালাচ্ছিলেন। নাম দিলেন bloghunt.com। ডোমেইন কিনে অনেক খুশি মনে সে ব্লগটি পরিচালনা করছিলেন। কিন্তু কয়েক মাস পরে একটি ঘটনা ঘটলো। হঠাৎই অচেনা নাম্বার থেকে তার কাছে কল আসা শুরু হলো। কেউ তার ঠিকানা জানে, কেউ আবার মজার ছলে বলছে, “আপনিতো এই ব্লগের মালিক, তাইনা?”
রাকিব অবাক হয়ে কিছুক্ষন বসে রইলেন এবং ভাবতে লাগলেন — সে তো কাউকে তার ফোন নাম্বার বা বাসার ঠিকানা দেয়নি! তাহলে, তারা কিভাবে তাকে খুজে পেল। পরে তার একটি কথা মনে পরে গেল যে, যেকোন ডোমেইন এর তথ্য WHOIS ডাটাবেসে পাওয়া যায় সার্চ করলে।
তখন সে তার নিজের ডোমেইনটি সার্চ করে দেখলেন যে সকল গুরুত্বপূর্ন তথ্য যেমন – নাম, ইমেইল, ফোন নাম্বার ও ঠিকানা সবকিছুই WHOIS ডাটাবেসে পাবলিকলি শো করছে। আর এভাবেই অপরিচিতরা তার তথ্য পেয়ে গেছে।
👉 আর, এখানেই আসে Domain Privacy Protection এর কথা।
ডোমেইন প্রাইভেসি প্রটেকশন কী?
ডোমেইন প্রাইভেসি প্রটেকশন হলো এমন একটি সেবা যা আপনার ডোমেইনের গুরুত্বপূর্ন রেজিস্ট্রেশন তথ্য (যেমন- নাম, ইমেইল, ফোন, ঠিকানা) সাধারণ মানুষের থেকে লুকিয়ে রাখে। এর পরিবর্তে আপনার ডোমেইন রেজিস্ট্রারের সাধারণ তথ্য দেখানো হয়।
মানে, আপনার ব্যক্তিগত তথ্য আর কেউ দেখতে পারবে না, বরং নিরাপদে গোপন থাকবে।
কেন বাংলাদেশে ডোমেইন প্রাইভেসি প্রটেকশন দরকার?
প্রায়শই শুনে থাকি, বিভিন্ন কোম্পানির সাইট হ্যাক হয়েছে বা সাইটে ম্যালওয়্যার এ্যাটাক হয়েছে। এটারও মূলত প্রধান কারন এই ডোমেইন প্রাইভেসি প্রটেকশন না থাকা। কারন, আপনার ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন তথ্য হ্যাকারের হাতে পৌছালে তারা এটি অপব্যবহার করতে পারে। বাংলাদেশে ডোমেইন প্রাইভেসি প্রটেকশন সম্পর্কে অনেকেই অজানা, তাইতো এটার গুরুত্ব সম্পর্কে জেনে আমাদের ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ন তথ্য দেওয়া হল যে কেন আমাদের ডোমেইন প্রাইভেসি প্রটেকশন প্রয়োজন –
- ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা: হ্যাকার, স্প্যামার বা প্রতারকরা আপনার ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে অপব্যবহার করতে পারে।
- স্প্যাম ইমেইল ও কল থেকে বাঁচা: অনেক সময় ইমেইল আইডি WHOIS-এ প্রকাশ থাকলে অসংখ্য স্প্যাম মেইল পেতে হয়।
- সাইবার হুমকি প্রতিরোধ: প্রতারণামূলক কল বা ফিশিং অ্যাটাক থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
- প্রফেশনাল ইমেজ: ডোমেইনের সাথে ভুয়া বা অপ্রাসঙ্গিক কন্টাক্ট ডিটেইল না থেকে প্রফেশনালভাবে রেজিস্ট্রারের ডিটেইলস দেখাবে।
- ব্যবসায়িক গোপনীয়তা বজায় রাখা: নতুন স্টার্টআপ বা ওয়েবসাইট লঞ্চ করার সময় প্রতিদ্বন্দ্বীরা আপনার তথ্য সহজে খুঁজে পাবে না।
বাংলাদেশে ডোমেইন প্রাইভেসি প্রটেকশন কিভাবে সক্রিয় করবেন?
- ডোমেইন রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে:
যেখান থেকে ডোমেইন কিনেছেন (Namecheap, GoDaddy, Hostinger, BDIX রেজিস্ট্রার ইত্যাদি), সেখানে “Privacy Protection” অপশন সক্রিয় করতে হবে। - অতিরিক্ত খরচ:
বেশিরভাগ ডোমেইন রেজিস্ট্রার বছরে প্রায় $2–$10 চার্জ করে। কিছু রেজিস্ট্রার আবার ফ্রি প্রাইভেসি প্রটেকশনও দেয়। - WHOIS চেক করুন:
সক্রিয় হওয়ার পর WHOIS Lookup করে দেখে নিন আপনার তথ্য লুকানো আছে কি না।
উদাহরণ (WHOIS তথ্য)

Without Privacy Protection:
Registrant Name: Rahim Uddin
Email: rahim@example.com
Phone: +880171111111
Address: Dhaka, Bangladesh
With Privacy Protection:
Registrant Name: Domain Privacy Service
Email: contact@privacyprotect.org
Phone: +1-111-111-1111
Address: Privacy Protected, USA
উপসংহার
রাকিবের গল্প থেকে আমরা বুঝতে পারলাম, Domain Privacy Protection শুধু একটি ফিচার নয়, বরং অনলাইন নিরাপত্তার প্রধান ও গুরুত্বপূর্ন ধাপ।
বাংলাদেশে অনেকেই ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন করেন, কিন্তু প্রাইভেসি প্রটেকশন চালু করেন না। এর ফলে অজান্তেই তারা স্প্যাম, ফিশিং বা হয়রানির ঝুঁকিতে পড়ে যান।
👉 তাই ডোমেইন কেনার সঙ্গে সঙ্গেই প্রাইভেসি প্রটেকশন সক্রিয় করুন। এতে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য নিরাপদ থাকবে এবং অনলাইন ব্যবসা বা ব্লগিং আরও নিশ্চিন্তে চালাতে পারবেন।
